সোহাগ হাওলাদার:
রাজধানীর মিরপুর গুদারাঘাট বেরিবাঁধ এলাকায় গাড়ি ওয়াসিং সেন্টারে দীর্ঘদিন ধরে মরা মুরগী বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে গ্যারেজ মালিক ওলির (৩৫) বিরুদ্ধে। রবিবার (২১ এপ্রিল) সকাল ৯ টার দিকে মিরপুরের গুদারাঘাট বেরিবাঁধ সংলগ্ন ওলির গ্যারেজ থেকে সুজন (২৫) নামের এক যুবককে মরা মুরগীসহ আটক করে এলাকাবাসী। সুজন জানায়, সে ওলির গ্যারেজ থেকে মরা মুরগী কিনে দিয়াবাড়ি বিআইডব্লিউটিএ লেন্ডিং স্টেশন সংলগ্ন জাহাজে সেগুলো পরিস্কার (ড্রেসিং) করে বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় কম দামে বিক্রি করে। সাধারণ মানুষ কম দামে বিক্রির কারণ জানতে চাইলে সুজন জানায় গাড়িতে মুরগী আনার সময় যেসব মুরগিগুলো ব্যাথা পায় অথবা ডানা,পাঁ ভেঙ্গে যায় এগুলো সেই মুরগী।
জানা যায়, বিআইডব্লিউটিএ’র জায়গা দখল করে দীর্ঘদিন ধরে মুরগী পরিবহনের গাড়ি ওয়াসিংয়ের কাজ করছে ওলি। প্রতিদিন ১৯ টি মুরগী পরিবহনের গাড়িসহ শতাধিক গাড়ি ওয়াস করা হয় তার গ্যারেজে। মুরগী পরিবহনের কাজে নিয়োজিত গাড়ি থেকে যে মুরগী মারা যায় সেগুলো ফেলে না দিয়ে দেদারসে সেই মরা মুরগী বিক্রি করছে ওলি। এই মরা মুরগী যাচ্ছে শহরের বিভিন্ন ছোট-বড় হোটেল ও ফুটপাতের বার্গার ও চাপের দোকানগুলোতে।
সরেজমিনে দেখা যায়, মরা মুরগী কেনা-বেচার সাথে জড়িত সুজনকে দুই বস্তা মরা মুরগীসহ আটকায় এলাকাবাসী। সুজনসহ বিভিন্ন মানুষের কাছে মরা মুরগী সরবরাহ করে থাকে পরিবহন ওয়াসিং গ্যারেজের দায়িত্বে থাকা ওলি নামের ওই ব্যক্তি। গাড়ি ওয়াসের এর আড়ালে দীর্ঘদিন ওলি মরা মুরগী বিক্রির কাজ করে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। গ্যারেজ মালিক ওলি কুকুর-বিড়ালকে খাওয়ানোর কথা বলে মরা মুরগী বিক্রি করলেও হোটেল ও মহল্লায় ফেরি করে বিক্রির কথা স্বীকার করে আটকৃত যুবক সুজন।
ওলির গ্যারেজে কর্মরত জাহাঙ্গীর মাতবর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, গ্যারেজের মহাজন ওলি মরা মুরগী বিক্রি করছে দীর্ঘদিন থেকেই। প্রতিদিন প্রায় সবগুলো গাড়িতেই মরা মুরগী থাকে। গ্যারেজে এসব গাড়ি আসার পর সব মরা মুরগী বস্তায় ভরে রেখে দেওয়া হয়। পরে টাকার বিনিময়ে তা বিক্রি করা হয়। ৫০ থেকে ১০০ টাকা প্রতিটি মরা মুরগির দাম রাখা হয়। তিনি জানান, কুকুর বিড়ালকে খাওয়ানোর জন্য অনেকেই মরা মুরগী কিনে নিয়ে যায় বলে জানি। এটা যে হোটেল বা মানুষের খাবারের জন্য নিয়ে যায় তা জানি না। তবে এরকম হলে খুবই খারাপ ও অপরাধ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্থানীয় প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর আওয়ামী লীগ নেতা ও গুদারাঘাট ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বাবুল তালুকদারের ক্ষমতায় ওলি গুদারাঘাট বেরিবাঁধ সংলগ্ন পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখল করে পরিবহন ওয়াসিং এর গ্যারেজ দিয়ে গাড়ি ওয়াসের আড়ালে অবৈধ কর্মকাণ্ড করে আসছে। মরা মুরগী বিক্রি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন অপকর্ম করারও অভিযোগ রয়েছে ওলির বিরুদ্ধে। এলাকায় প্রভাব থাকায় কেউ এতদিন এসব নিয়ে কোনো কথা বলার সাহস পায়নি।
গ্যারেজ মালিক ওলি বলেন, কুকুর ও বিড়ালের জন্য অনেকেই মরা মুরগী কিনে নিয়ে যায়। আর মরা মুরগী শুধু আমিই বিক্রি করি না, অন্যান্য গ্যারেজেও মরা মুরগী বিক্রি হয়। তাদের তো কেউ ধরে না!
এ ব্যাপারে শাহ্ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।