বরগুনা প্রতিনিধি:
বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা বাজারে ব্যবসায়িদের কাছ থেকে বৈশাখী উৎসব ও হালখাতা উপলক্ষে চাঁদাবাজীর অভিযোগ অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। ওই নেতা প্রকাশ্যে মাইকিং করে জানাচ্ছেন চাঁদাবাজির টাকা তিনি পুলিশকে দিয়েছেন, এমন একটি ভিডিও বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অভিযুক্ত ওই নেতার নাম মো. হাবিবুর রহমান খলিফা। তিনি ডৌয়াতলা ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও ৫ আগষ্ট পরবর্তী সময়ে ডৌয়াতলা বাজার কমিটির স্ব-ঘোষিত সেক্রেটারী।
জানাগেছে, দ্বির্ঘ কয়েক যুগ ধরে ২ বৈশাখ ডৌয়াতলা বাজারের ব্যাবসায়ীরা হালখাতা ও নববর্ষ উৎসব পালন করে থাকে। প্রতিবছর এদিনে ডৌয়াতলা বাজারে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। দোকানীদের কেনাবেচা চলে গভীর রাত পর্যন্ত।
তবে অভিযোগ উঠেছে, বাজার কমিটির সেক্রেটারী ও স্থানীয় বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান খলিফার নেতৃত্বে হালখাতা উৎসবে ডৌয়াতলা বাজারে আসা ভাসমান বিক্রেতা ও স্থাণীয় দোকানীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা হয়েছে। ওই বিএনপি নেতাকে দোকান ভেদে সর্বনিম্ম একশত টাকা দিতে বাধ্য হয়েছেন ব্যবসায়িরা।
এদিকে ওই নেতার চাঁদাবাজির ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তিনি স্থানীয় কয়েকজন ব্যবসায়ি ও নেতাকর্মী নিয়ে জরুরী সভা ডাকেন। ওই সভায় প্রকাশ্যে তিনি ডৌয়াতলা বাজারের ব্যবসায়িদের কাছ থেকে চাঁদা তোলা ও ওই চাঁদার টাকা থেকে কিছু টাকা পুলিশকে দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তার স্বীকারোক্তীমুলক একটি ভিডিও গত মঙ্গলবার রাত থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখাগেছে তিনি প্রকাশ্যে একটি মাইক্রোফোন নিয়ে মাইকে কথা বলতেছেন। এসময় তাকে বলতে শোনা গেছে, পনেরো টাকা উঠছে, সকালে যারা আইছে চারজন পুলিশ তাদের কয়টাকা ভাত খেতে দেওয়া লাগে? অন্ততো দুই হাজার টাকা দেওয়া লাগে, এক হাজার টাকা দিয়েছি। রাতে যারা আইছে(পুলিশ) তাদের তো একহাজার দেওয়াই লাগে। আমাদের বাজারে লক্ষ লক্ষ টাকা কালেকশন হইছে আমি যদি প্রত্যেক দোকানে যাইতাম প্রত্যেকে আমারে একশত টাকা দিতো। সেখানে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা উঠতো। ৫ হাজার তো উঠতো। সেখানে পুলিশরে ২ হাজার দিয়া ৩ হাজার আমার পকেটে থুইতাম। আমি চিন্তা করছি ওই টাকা উঠাইতে গিয়া আমার দোকানের বেশী ক্ষতি হইয়া যায়। তাই পকেট থেকে ৫শত পুরাইয়া আমি পুলিশকে দিয়া দিছি। আমি আপনাগো কাউরে ডিষ্ট্রাব না কইরা থাকি তাহলে আমার নামে যদি এতো বড় বদনাম দেয় আপনারা কি বিচার চান। আমার নেতা আইবে দরকার হলে মনি ভাই আইবে।
এব্যপারে কথা হয় ডৌযাতলা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়িদের সাথে তারা জানান, বাজার কমিটি অনেক দোকান থেকেই চাঁদা তুলেছে। তবে এ ঘটনাটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে তারা চাঁদা তোলা বন্ধ করে দেয়।
বাজারের গার্মেন্টস ব্যবসায়ি মো. খলিল জানান, বাজার কমিটি অনেক দোকান থেকে টাকা নিয়েছে। আমার এই গলিতে আসার আগেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। তাই আমার এখানে আসেনি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ব্যবসায়ি বলেন, ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপি'র সাধারণ সম্পাদক আবু সালে বিএনপি নেতা বাবুল মিলিটারি ও হাবিব খলিফার নেতৃত্বে বৈশাখী মেলার জন্য চাঁদা তোলা হলেও শুধুমাত্র হাবিব খলিফাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। তবে হাবিব খলিফা বর্তমানে অনির্বোচিত অবৈধ বাজার কমিটি। সে বিভিন্ন দোকান থেকে মাঝে মাঝে টাকা তোলে। টাকা তোলার কারণও রয়েছে। দেখা গেছে বাজারের একটি টিউবঅয়েলের ওয়াশার দরকার সেখানে যা টাকা খরচ হয় তারা তার অধিক তুলে। আর হালখাতা উপলক্ষে টাকা তুলেছে এ ঘটনাটি সত্য তবে টাকা তুলে পুলিশকে দিয়েছে সেটা ভিডিও দেখে জেনেছি।
ডৌয়াতলা ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি রাজিব হাওলাদার বলেন, হাবিব খলিফা নিজের বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন তিনি চাঁদা তুলেছেন। তিনি অবৈধভাবে সেক্রেটারী হয়েছেন। বাজারের কোন ব্যবসায়িরা তাকে সেক্রেটারী নির্বাচিত করেনি। নববর্ষে তিনি ব্যবসায়িদের কাছ থেকে চাঁদাবাজী করেছেন আর সেই টাকাই তিনি পুলিশকে দিয়েছেন।
এব্যপারে অভিযুক্ত বাজার কমিটির স্ব-ঘোষিত সেক্রেটারী ও বিএনপি নেতা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, ডৌয়াতলা বাজারে আমি টাকা তুলিনি। আমার বিরুদ্ধে চাঁদাতোলার অভিযোগ উঠলে আমি ব্যবসায়িদের নিয়ে সভা করি। ওই সভায় ভুল করে বলেছি আমি পুলিশকে টাকা দিয়েছি। আসলে আমি কথাটা বুঝিয়ে বলতে পারিনি। হালখাতা উপলক্ষে ডিউটিরত পুলিশদের নিয়ে দুপুরেও রাতে আমি একসাথে খাওয়া দাওয়া করি। আমি তাদেরকে কোন টাকা পয়সা দেই নি এবং কোন টাকা পয়সা আদায়ও করিনি।
এব্যপারে বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) হারুন অর রশিদ হাওলাদার বলেন, আমি আদৌ কিছু জানিনা। টাকা তুলেছে কিনা তাও জানিনা। আমাকে দেওয়ার তো কিছুই নাই। আপনি তাদেরকে চার্জ করেন কাকে দিছেন কোন পুলিশকে টাকা দিছেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : ইসমাইল হোসেন সৌরভ,
নির্বাহী সম্পাদক:মো:শাহাবুদ্দিন খান
বার্তা প্রধান : মোহাম্মদ শাহ্ কামাল,
কপিরাইট © সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত