নিজস্ব প্রতিবেদক:
নির্ধারিত এলাকার বাইরে অভিযান চালিয়ে মাদকসহ নারী ব্যবসায়ীকে আটকের পর ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় সাময়িক বরখাস্ত হয়েছে বরিশাল নগর গোয়েন্দা পুলিশের এএসআই আউয়াল। ছেড়ে দেওয়ার আগে আটক নারীর সঙ্গে থাকা অসংখ্য ইয়াবা ও নগদ ৭৪ হাজার টাকা রেখে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
এ অভিযোগ তুলে মাদকসহ আটক নারীর স্বামী মিজান বরিশাল নগর পুলিশের কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এরপর অভিযুক্ত এএসআইর বিরুদ্ধে পুলিশ কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন বরিশাল নগর গোয়েন্দা শাখার ইন্সপেক্টর ছগির। ঘটনার তদন্ত শেষে সত্যতা পাওয়ায় তাকে বরখাস্ত করা হয়।
এ ঘটনার তদন্ত করেছেন নগর পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার রিয়াজ হোসেন।
এর আগে গত ২৬ মার্চ বরিশাল নগর গোয়েন্দা শাখায় কর্মরত এএসআই আউয়াল জেলার গৌরনদী উপজেলায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে অভিযানে যায়। তখন মাদক ব্যবসায়ী মিজানের স্ত্রীকে বিপুল সংখ্যক ইয়াবাসহ আটক করে আউয়াল। পরে ইয়াবা ও টাকা রেখে আটক স্ত্রীকে ছেড়ে দিলে নগর পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলামের কাছে অভিযোগ দেন স্বামী মিজান।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, মাদক ব্যবসায়ী মিজানের স্ত্রীকে বিপুল সংখ্যক ইয়াবাসহ আটক করে এএসআই আউয়াল। এরপর সঙ্গে থাকা ইয়াবাসহ নগদ ৭৪ হাজার টাকা রেখে অভিযুক্ত নারীকে ছেড়ে দেয় আউয়াল। ওই নারীর স্বামী মাদক ব্যবসায়ী মিজান বিষয়টি বরিশাল নগর পুলিশের কমিশনারকে জানান।
এরপর নগর গোয়েন্দা শাখার ইন্সপেক্টর ছগির আউয়ালের বিরুদ্ধে কমিশনার বরাবর লিখিত অভিযোগ দেয়। অভিযোগের তদন্ত করেন সহকারী পুলিশ কমিশনার রিয়াজ হোসেন। তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় এএসআই আউয়ালকে ৬ এপ্রিল সাময়িক বরখাস্ত করে বরিশাল পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, নগর গোয়েন্দা শাখার এএসআই আউয়ালকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলমান আছে। তদন্ত শেষে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তথ্যমতে, চাকরির শুরুতে কনস্টেবল পদে যোগদান করা আউয়াল পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হওয়ার পর থেকে এক যুগের বেশি সময় ধরে বরিশাল নগর পুলিশে কর্মরত আছেন। দীর্ঘদিন একই স্থান থেকে নগরীর নবগ্রাম রোডে কোটি টাকা মূল্যের দুটি প্লটসহ কয়েকটি জমির মালিক বনে গেছেন।
এছাড়া এএসআই আউয়ালের গ্রামের বাড়ি বরগুনাতে কিনেছেন নামে-বেনামে কয়েক একর জমি। অভিযোগ রয়েছে, এএসআই আউয়াল মাদকের বড়-বড় চালানসহ আটকের পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলা না দিয়ে মোটা অংকের ঘুসে বিনিময় তাদের ছেড়ে দিতেন। পরে ওই উদ্ধার হওয়া মাদক গোপনে বিক্রি করতেন আউয়াল।
এএসআইয়ের এমন কর্মকাণ্ডের পর স্বাভাবিকতই প্রশ্ন উটেছে- আটকের পর এসব ইয়াবা দিয়ে এই এএসআই কি করেন? সরকারি হিসেবে জমা না হলে এসব ইয়াবা কোথায় যায়? এ বিষয়ে অনুসন্ধান থেকে জানা যায়, পুলিশি অভিযানে ইয়াবা উদ্ধার হলে তা চলে যায় বরগুনায় বসবাসরত আউয়ালের শ্যালোক (স্ত্রীর আপন ভাই) তালিবুল ইসলাম মাসুদের হাতে। এরপর মাসুদ বোন জামাতার ক্ষমতা ব্যবহার করে এসব ইয়াবা পাইকারি বিক্রি করেন বরগুনার আমতলি, তালতলী ও মহীপুর এলাকায়।
এ বিষয়ে জানতে এএসআই আউয়ালের মোবাইল ফোনে কল দিলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।