রেদওয়ানা আফরিন:

বরগুনার ইমরান খান নামের এক ছাত্রদল নেতাকে আসামী করে বরগুনা আদালতে একটি ধর্ষণ চেষ্টার মামলা করেছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেত্রী। মামলায় উল্লেখিত ঘটনার তারিখ ও সময়ে তিনি ঘটনাস্থল তো দূরের কথা উপজেলায়ই ছিলেন না বলে দাবী করেছেন আমতলী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইমরান খান। প্রমান হিসেবে একাধিক সিসি টিভি ফুটেজও উপস্থাপন করেছেন।

বিষয়টি নিয়ে জেলাজুড়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়েছে। সরেজমিন ঘুরে পাওয়া গেছে ভিন্ন তথ্য যা সম্পূর্ণ মামলার অভিযোগের বিবরণের বিপরিত চিত্র।

মামলার অভিযোগে বাদী ফাতেমা তুজ জোহরা মৈতি উল্লেখ করেছেন, গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমতলী পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পল্লবী সড়কের এ কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে রিক্সা যোগে বাসায় যাওয়ার সময় মটর সাইকেলে এসে আমতলী উপজেলা ছাত্র দলের সদস্য সচিব ইমরান খান বাদী মৈতির স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করে এবং অপহরণের চেষ্টা করে। এর আগেও প্রেমের প্রস্তাব ও কুপ্রস্তাব দিতেন ইমরান খান।

গত ১৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমতলী পৌর শহরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের পল্লবী সড়কের এ কে স্কুলের সামনের রাস্তার উপরে বসে ইমরান খান বাদী ফাতেমাতুজ জোহরা মৈতিকে শ্লীলতাহানি ও অপহরণের চেষ্টার ঘটনা দেখিয়ে ১৮ মার্চ বরগুনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা দায়ের করা হয়। এদিকে এ কে স্কুলের নৈশ প্রহরী আহসান কিংবা আসেপাশে থাকা দোকানীরা অথবা এলাকাবাসী একরম কোন ঘটনার বিষয় তারা জানেন না বা শোনেন নি। বিগত ১ মাসেও এ এলাকায় এমন কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানান স্থানীয়রা।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, মামলার বাদী ফাতেমা তুজ জোহরা মৈতি আমতলী পৌর শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের জনৈক গোলাম মোস্তফার মেয়ে। এর আগেও পৈত্রিক জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জেরে জব্দ করতে মেয়ে মৈতিকে ভিকটিম সাজিয়ে আপন ভাইয়ের ছেলে ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণ চেষ্টা মামলা করেছিলেন গোলাম মোস্তফা। তাছাড়াও গোলাম মোস্তফা নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের আমতলী উপজেলা শাখার প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি ছিলেন। মেয়ে ফাতিমা তুজ জোহরা মৈতি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের আমতলী উপজেলা শাখার উপ ছাত্র বিষয় সম্পাদক। তবে মৈতির দাবী মতে তিনি ২০২৪ সালের ১৬ জুন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে তিনি ছাত্রলীগ থেকে পদত্যাগ করেছেন।

আমতলী এ কে স্কুলের নৈশ প্রহরী আহসান বলেন, গত ১৬ তারিখে এরকম কোন ঘটনা আমরা শুনিনি। আম সব সময়ই এখানে থাকি বিগত একমাসেও এরকম কোন ঘটনার কথা আমরা শুনিনি।

এ কে স্কুল গেটের অদুরের সেলুনের একাধিক নরসুন্দর (নাপিত), আশেপাশের একাধিক ব্যবসায়ী ও স্থানীয়রা মামলায় উল্লেখিত গত ১৬ তারিখে এমন কোন ঘটনা দেখেননি বা লোকমুখেও শোনেনি বলে কালবেলাকে জানিয়েছেন তারা।

আমতলী সরকারি কলেজ ও এ কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীদের সাথে কথা হলে তারা জানান, ইমরান খানকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করতেই নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের আমতলী উপজেলা শাখার এক নেত্রী ইমারন খানের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছে। এসময় ইমরান খানের বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানি ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগে দায়ের করা মামলা মিথ্যা দাবী করে প্রতিবাদ জানান এসকল শিক্ষার্থীরা।

স্থানীয় একাধিক এলাকাবাসীর সাথে কথা হলে তারা জানান, ফাতেমা তুজ জোহরা মৈতি কিছুদিন আগে ভিন্ন ধর্মাবলম্বী এক যুবকের সাথে প্রেমের সম্পর্ক করে ওই ছেলের বাবার কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা আদায় করেছেন। এছাড়াও মৈতি একাধিক ব্যক্তিকে মামলা দিয়ে জব্দ করে টাকা আদায় করেছেন। এসময় ইমরান খানকে নির্দোষ দাবী করেছেন তারা।

ভুক্তভোগী আমতলী উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব ইমরান খান গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে তার রাজধানীর চকবাজার ও আবাসিক হোটেলে অবস্থানের একাধিক ভিডিও ফুটেজ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমতলী উপজেলা বিএনপি থেকে বহিষ্কার হওয়া একটি গ্রুপ চক্রান্ত করে ছাত্রলীগ নেত্রী মৈতিকে দিয়ে মামলাদিয়ে তাকে হয়রানির চেষ্টা করছে। মামলায় উল্লেখিত ঘটনার তারিখ ও সময়ে তিনি রাজধানী ঢাকায় অবস্থান করেছিলেন।

তাছাড়া ফেসবুকে ধর্ষণের হুমকির বিষয়ে ইমরান জানান, আমার ফেসবুক আইডি ক্লোন করে এমনটি করা হয়েছে। আইডি ক্লোন হওয়ার বিষয়টি আমি থানার ওসিকে মোবাইল ফোনে জানিয়ে সাধারণ ডায়েরী করতে চাইলে সাধারণ ডায়েরী করার প্রয়োজন নেই বলে ফেসবুকে, এ বিষয়ে একটি স্টাটাস দিতে বলেন। আমি তার পরামর্শ মতে ফেসবুক স্টাটাস দিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, গত ৫ আগস্টের পরে আমতলী উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে বসে বিএনপি ও জামায়েত ইসলামী নিয়ে কটাক্ষ করে কথা বলেন মৈতি। এসময় আমি আমার দল বিএনপি নিয়ে কটাক্ষের প্রতিবাদ করার কারনে আমাকে জব্দ করতে এই মিথ্যা ও হয়রানি মূলক মামলা দায়ের করেছে। এছাড়াও গত ৫ই আগস্টের পর থেকে ফাতেমা তুজ জোহরা মৈতি নিজেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক দাবী করে বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে প্রভাব বিস্তার করে আসছেন।

মামলার বাদী ফাতেমা তুজ জোহরা মৈতি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেকে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আমতলী উপজেলার একজন সমন্বয়ক দাবী করে মামলার অভিযোগের ঘটনা সত্য বলে গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরেন। এসময় গণমাধ্যম কর্মীরা ইমরান খানের ঢাকায় অবস্থানের সিসি টিভি ফুটেজের কথা উল্লেখ করলে মৈতি জানান, তার মোবাইল ট্রাকিং করতে বলেন।

আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ ইসলাম বলেন, ফেসবুক আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়ে ইমরান খান আমার সাথে ফোনে যোগাযোগ করেছিলেন। তবে তার (ইমরান খান) আইডি হ্যাক হয়েছিলো। কি না? তা আমার জানা নেই। তদন্তকারী কর্মকর্তা মামলার তদন্ত করছেন।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল আলম মোবাইল ফোনে তার দপ্তরে বসে বাক বিতণ্ডার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে মামলা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।