নিজস্ব প্রতিবেদক:
হালিমা খাতুনের বয়স প্রায় নব্বই ছুঁই ছুঁই। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে দাঁড়ালেও এখনো তিনি জীবিত। তবে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) সার্ভারে তাঁকে মৃত দেখানো হয়েছে। এজন্য বয়স্ক ভাতা পাচ্ছেন না হালিমা।
বর্তমানে হালিমা ছেলেদের সঙ্গে থাকেন। সম্প্রতি ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে উপজেলা সমাজসেবা অফিসে বয়স্ক ভাতার আবেদন করতে গেলে বিষয়টি জানতে পারে তাঁর পরিবার। এনআইডি সার্ভারে মৃত হিসেবে উল্লেখ থাকায় হালিমা বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারি সাহায্য থেকে।
হালিমাকে এনআইডি সার্ভারে তাঁকে জীবিত দেখানোর দাবি জানিয়েছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ, যাতে তিনি বয়স্কভাতা পান।
বড় গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, হালিমা খাতুনের বাড়ি শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড় গোপালপুর ইউনিয়নের আইজউদ্দিন সিকদার কান্দি এলাকায়। স্বামীর নাম কাইয়ুম সিকদার। তাঁর জন্ম ১৯৩৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোট দিতে গিয়েছিলেন হালিমা খাতুন। তবে আঙুলের ছাপ না মেলায় ভোট না দিতে পেরে সেদিন বাড়ি ফিরে যান তিনি। তখন অবশ্য বিষয়টি আমলে নেয়নি পরিবারের সদস্যরা।
সম্প্রতি বয়স্ক ভাতার কার্ডের জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে আবেদন করলে সেখান থেকে জানানো হয় তিনি ‘মৃত’। ২০১৯ সাল থেকে অনলাইন সার্ভারের জাতীয় পরিচয়পত্রে তাঁকে মৃত দেখাচ্ছে।
হালিমার ছেলের বউ ফাতেমা বেগম বলেন, ‘আমরা পরিবারে সাতজন লোক। স্বামী ভ্যানগাড়ি চালায়। তাই বয়স্ক ভাতা করতে গেলে তারা বলে, শাশুড়ি মারা গেছেন। শাশুড়িতো জীবিত! সরকার যদি বয়স্ক ভাতা করে দেয়, তাহলে পরিবার নিয়ে আমরা ভালো থাকতে পারতাম।’
স্থানীয়রা বলেন, হালিমা এখনো জীবিত আছেন। তাঁরা গরীব পরিবার। তাঁর ছেলে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। তাঁকে যদি বয়স্ক ভাতা দেওয়া হয়, তাহলে সুন্দরভাবে চলতে পারবেন।
বড় গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘হালিমা জীবিত আছেন। ভুলবশত নির্বাচন অফিস লিখেছে হালিমা মৃত। তবে ইউনিয়ন পরিষদে কোনো ভুল হয়নি, হালিমা জীবিত আছেন। পরিষদে বিধবাভাতা ও বয়স্ক ভাতার জন্য আবেদন করলে অনলাইনের সার্ভারে মৃত দেখায় তাঁকে। এজন্য বয়স্ক ভাতা ক্যানসেল করা হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা এটার দ্রুত নিষ্পত্তি চাই। হালিমাকে সার্ভার থেকে জীবিত দেখানো হোক, যাতে তিনি বয়স্কভাতা পেতে পারেন।’
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আবদুল মান্নান বলেন, ‘তাঁর (হালিমা) ডেড স্ট্যাটাস রয়েছে, এটা সঠিক। তবে কি কারণে হয়েছে এটা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। এটা তদন্তের বিষয় রয়েছে। হালিমা যদি আমাদের কাছে আসেন, তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র ঠিক করে দেওয়া হবে।’