এম জাফরান হারুন, নিজস্ব প্রতিবেদক, পটুয়াখালী::
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের পূর্ব বিলবিলাস গ্রামে মামার চুরির অপরাধে সদ্য বিবাহিত ভাগ্নীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে রাত ৯ থেকে ১টা পর্যন্ত সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের সেই ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ভয়ভীতি দেখিয়ে রফাদফা শেষে ভুক্তভোগী ভাগ্নী সহ তার জামাই ও মা কে জোরপূর্বক ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বাস্ত ও সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ধর্ষণের বিচার চাইতে ভাগ্নীর মা পায়তারা করলে প্রভাবশালী মহল খুব চাপ সৃষ্টি করে ওই পরিবারের ওপর। পরে উপায়ন্ত না পেয়ে গত বুধবার (৬ই সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১১টার পরে বিলবিলাস বাজার সংলগ্ন এক আত্মীয়র বাসায় বসে জোরপূর্বক ভয়ভীতি দেখিয়ে এক মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রফাদফা করা হয়। পরে ভুক্তভোগীদের মাত্র ১ লক্ষ ৯ হাজার টাকা দিয়ে বৃহস্পতিবার ভোরবেলায়ই অটোগাড়ি দিয়ে প্রথমে দুমকির লেবুখালী পাঠানো হয়। সেখান থেকে বাসযোগে তাদের ঢাকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এবং ভুক্তভোগীদের পাঠিয়ে দেওয়ার আগে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল সিম বন্ধ করে নতুন সিম কার্ড কিনে তা ব্যবহার করতে দেওয়া হয়। আর যারা শালিসে বসে রফাদফা করেছেন তারা মোটা অংকের অবশিষ্ট টাকা ভাগবাটোয়ারা করে নেন। সেই টাকা দিয়ে কেউ আবার বড় বড় হালি হালি ইলিশ মাছও কিনে বাড়ি নেন। কথায় বলে ‘কারও পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ’।
আরও জানায়, গত শুক্রবার বিভিন্ন প্রিন্ট ও অনলাইন পত্রিকায় ” বাউফলে মামার চুরির অপরাধে ভাগ্নীকে ধরে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ ” সংবাদ প্রকাশিত হয়ে প্রচার হলে প্রশাসন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের নজরে আসলে ওই ধর্ষকরা সহ শালিসের মাধ্যমে রফাদফা করা প্রভাবশালী মহল দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন এবং ভাগ্নীর আরেক মামা রফিক নামক একজন কে নিয়ে প্রশাসনের কাছে মিথ্যা বানোয়াট সাজানো বক্তব্য দেওয়া হয়। এমন নেক্কারজনক ঘটনা ধামাচাপা ও বিচার না পেয়ে ভুক্তভোগীরা গ্রাম ছাড়া হওয়ায় এবং রফাদফা নামক ধ্বংসের এক পাত্রের খবরে এখন স্থানীয় সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভের দেখা দিয়েছে।
উল্লেখ্য, একাধিক সূত্রে, সংশ্লিষ্ট ও স্থানীয়রা জানান, বাউফল থানা ব্রিজের ঢালে কাচা মালের ব্যাবসায়ী আল ইসলামের বাসায় ভাড়া থাকতো পূর্ব বিলবিলাস গ্রামের শফিকুল ইসলাম শফিক। শফিক ওখানে থেকে আল ইসলামের ভাড়ায় চালিত অটোরিকশা ভাড়া চালাতো। শফিক সেই অটোরিকশা বিক্রি করে এবং একটি ছাগল চুরি করে নিজের বাড়ি বিলবিলাস চলে আসে। মঙ্গলবার (৫ই সেপ্টেম্বর) সকালে কাচামাল ব্যবসায়ী বাড়ির মালিক আল ইসলাম ও তার ছেলে ইব্রাহিম শফিক কে খুজতে এবং মালামাল উদ্ধার করতে শফিকের বাড়িতে আসে। পূর্বেই আল ইসলাম ও তার ছেলে ইব্রাহিম স্থানীয় চৌকিদার শামীম কে খবর দিয়ে সাথে করে নিয়ে আসেন। পরে শফিকের বোন তাসলিমা বেগমের ঘর থেকে চুরি হওয়া ছাগল উদ্ধার করে নিয়ে চলে যায়। তবে শফিক পলাতক থাকায় তাকে ধরতে না পেরে ছাগল নিয়ে চলে যান তারা। পুনরায় একইদিন (মঙ্গলবার) রাত ৮টার দিকে আল ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম আরও দুই একজন ছেলেপান নিয়ে শফিকের বোন তাসলিমা বেগমের বাড়ি এসে শামীম চৌকিদারের সহযোগিতায় রাত ৯টার দিকে তাসলিমা বেগমের মেয়ে ওই সদ্য বিবাহিত শফিকের ভাগ্নী ও ভাগ্নী জামাই কে নিয়ে ইব্রাহিম বাউফল চলে যায়। এবং রাত ১টার দিকে ভাগ্নী ও ভাগ্নী জামাই বাড়িতে ফিরে আসে। পরে শুনতে পাওয়া যায় যে ভাগ্নী জামাই কে এক জায়গায় রেখে ভাগ্নীকে সংঘবদ্ধভাবে শারিরীক নির্যাতন করেছে।
স্থানীয় শামীম চৌকিদার বলেন, আল ইসলামের বাসায় ভাড়া থেকে শফিক নাকি তাদের ছাগল ও অটোরিকশা চুরি করে চলে এসেছে এমন খবর পেয়ে আল ইসলাম ও তার ছেলে ইব্রাহিম সহ স্থানীয়দের উপস্থিতিতে শফিকের বোন তাসলিমা বেগমের ঘর থেকে চুরি হওয়া ছাগল উদ্ধার করা হয়। এবং পুনরায় ইব্রাহিম ওইদিন রাত আনুমানিক ৮টার দিকে শফিকের বাড়িতে আসলে সেখানে তাদের খবর পেয়ে আমিও উপস্থিত হই। এসময় ওই ভাগ্নী ও ভাগ্নী জামাই নাকি চোরের বাড়ি থাকবেনা তাই তাদের নিয়ে গিয়ে বাসস্ট্যান্ড জামাইয়ের ৩ জন লোকের কাছে তাদের বুঝিয়ে দিয়ে চলে আসি। পরের দিন বুধবার সকালে আমাকে খবর দিয়ে ভাগ্নী ও ভাগ্নীর মা সহ জামাই জানায় যে ভাগ্নী কে নাকি নির্যাতন করা হয়েছে। তখন তাদের আমি বলেছি আপনারা আইনের আশ্রয় নিন।
ভাগ্নীর মা তাসলিমা বেগমের মুঠোফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে কেঁদে ফেলে বলেন, আমার সর্বনাশ হয়েছে। কাচামাল ব্যবসায়ী আল ইসলামের ছেলে ইব্রাহিম মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে স্থানীয় শামীম চৌকিদারের মাধ্যমে রাতে প্রথমে আমার সদ্য বিবাহিত মেয়ে জামাই কে ডেকে নিয়ে যায়। পরে জামাইয়ের মাধ্যমে মেয়েকে ডেকে নিয়ে তারা সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করেছে। মেয়ে ও জামাই রাত ১টার দিকে বাড়ি ঢুকে ধর্ষণের কথা জানায়। এব্যাপারে আমি বিচার চাইতে থানায় যেতে পারছিনা। বাবুল কমিশনার নাকি বিষয়টি দেখবেন বলে আমাকে আমাদের বাধা বিপত্তি করেন। আমি বিচার চাই, বিচার চাই।
এব্যাপারে বাবুল কমিশনার বলেন, তেমন কিছু না। বিষয়টি হলো টাকা চুরির বিষয় নিয়ে। এখানে ধর্ষণের মতো কিছু ঘটেনি।
কাচামাল ব্যবসায়ী আল ইসলামের কাছে সরেজমিনে ঘটনার কথা জানতে চাইলে তিনি কিছু না বলে বিষয়টি এড়িয়ে চলে যান।
ধর্ষণের অভিযোগের ভিত্তিতে কাচামাল ব্যবসায়ী আল ইসলামের ছেলে ইব্রাহিমের কাছে জানতে তার মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করে কথা না বলায় কোনও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় চেয়ারম্যান জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বলেন, এমন ঘৃন্য কাজ আমি ভাবতেই পারিনা। আমি এই মুহূর্তে ঢাকাতে আছি। তবে অপরাধী যেইই হোক না কেন সে অপরাধের সাজা পাক এটাই আমার কামনা।
এবিষয়ে বাউফল থানার ওসি এটিএম আরিচুল হক বলেন, এব্যাপারে এখনো কোনও অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে সত্যতা উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।